উক্তি পরিবর্তন

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (পুরোনো সংস্করণ) - পঞ্চম অধ্যায় | | NCTB BOOK
9

কোনো কথকের বাক কর্মের নামই উক্তি। উক্তি দুই প্রকার : প্রত্যক্ষ উক্তি ও পরোক্ষ উক্তি।
যে বাক্যে বক্তার কথা অবিকল উদ্ধৃত হয়, তাকে প্রত্যক্ষ উক্তি বলে। যথা – তিনি বললেন, “বইটা আমার
দরকার।” যে বাক্যে বক্তার উক্তি অন্যের জবানিতে রূপান্তরিতভাবে প্রকাশিত হয়, তাকে পরোক্ষ উক্তি বলা হয়। যথা :
তিনি বললেন যে বইটা তাঁর দরকার।
উক্তি পরিবর্তনের নিয়ম
১. প্রত্যক্ষ উক্তিতে বক্তার বক্তব্যটুকু উদ্ধরণ চিহ্নের (“ ”) অন্তর্ভুক্ত থাকে। পরোক্ষ উক্তিতে উদ্ধরণ চিহ্ন লোপ পায়। প্রথম উদ্ধরণ চিহ্ন স্থানে ‘যে’ এই সংযোজক অব্যয়টি ব্যবহার করতে হয়। বাক্যের সঙ্গতি রক্ষার জন্য উক্তিতে ব্যবহৃত বক্তার পুরুষের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন- প্রত্যক্ষ উক্তি : খোকা বলল, “আমার বাবা বাড়ি নেই।”
পরোক্ষ উক্তি : খোকা বলল যে, তার বাবা বাড়ি ছিলেন না।
২. বাক্যের অর্থ-সঙ্গতি রক্ষার জন্য সর্বনামের পরিবর্তন করতে হয়। যেমন- প্রত্যক্ষ উক্তি : রশিদ বলল, “আমার ভাই আজই ঢাকা যাচ্ছেন।” পরোক্ষ উক্তি : রশিদ বলল যে, তার ভাই সেদিনই ঢাকা যাচ্ছিলেন।
৩. প্রত্যক্ষ উক্তির কালবাচক পদকে পরোক্ষ উক্তিতে অর্থ অনুসারী করতে হয়। যেমন-
প্রত্যক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন, “কাল তোমাদের ছুটি থাকবে।”
পরোক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন যে, পরদিন আমাদের ছুটি থাকবে।

৪. প্রত্যক্ষ উক্তির বাক্যের সর্বনাম এবং কালসূচক শব্দের পরোক্ষ উক্তিতে নিম্নলিখিত পরিবর্তন সংঘটিত হয় ।

৫।অর্থ সঙ্গতি রক্ষার জন্য পরোক্ষ উক্তিতে ক্রিয়াপদের পরিবর্তন হতে পারে। যেমন— প্রত্যক্ষ উক্তি রহমান বলল, “আমি এখনই আসছি'। পরোক্ষ উক্তি : রহমান বলল যে, সে তখনই যাচ্ছে।
ক) প্রত্যক্ষ উক্তি পরোক্ষ উক্তি : ছেলেটি লিখেছিল, “শহরে খুব গরম পড়েছে।”

                          পরোক্ষ উক্তি :  ছেলেটি লিখেছিল যে, শহরে খুব গরম পড়েছিল।
৬. আশ্রিত খন্ড বাক্যের ক্রিয়ার কাল পরোক্ষ উক্তিতে সব সময় মূল বাক্যাংশের ক্রিয়ার কালের উপর নির্ভর করে না ।

খ.     প্রত্যক্ষ উক্তি : করিম বলেছিল, “আমি বাজারে যাচ্ছি।”
         পরোক্ষ উক্তি : করিম বলেছিল যে, সে বাজারে যাচ্ছে।
গ)       প্রত্যক্ষ উক্তি:মনসুর বলল, “আমি ঢাকা যাব । ”
           পরোক্ষ উক্তি : মনসুর বলল যে, সে ঢাকা যাবে।
প্রত্যক্ষ উক্তিতে কোনো চিরন্তন সত্যের উদ্ধৃতি থাকলে পরোক্ষ উক্তিতে কালের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন-
ক)      প্রত্যক্ষ উক্তি শিক্ষক বললেন, “পৃথিবী গোলাকার।”
          পরোক্ষ উক্তি : শিক্ষক বললেন যে, পৃথিবী গোলাকার।
খ)      প্রত্যক্ষ উক্তি বৈজ্ঞানিক বললেন, “চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে।”
          পরোক্ষ উক্তি বৈজ্ঞানিক বললেন যে, চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করে।

প্রশ্নবোধক বাক্য
ক)    প্রত্যক্ষ উক্তি শিক্ষক বললেন, “তোমরা কি ছুটি চাও?”
       পরোক্ষ উক্তি : আমরা ছুটি চাই কি না, শিক্ষক তা জিজ্ঞাসা করলেন।
খ.   প্রত্যক্ষ উক্তি : বাবা বললেন, “কবে নাগাদ তোমাদের ফল বের হবে?”
     পরোক্ষ উক্তি :আমাদের ফল কবে নাগাদ বের হবে, বাবা তা জানতে চাইলেন ।


অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
ক)     প্রত্যক্ষ উক্তি  : হামিদ বলল, “তোমরা আগামীকাল এসো।”

         পরোক্ষ উক্তি :  হামিদ তাদের পরদিন আসতে (বা যেতে) বলল।
খ.      প্রত্যক্ষ উক্তি : তিনি বললেন, “দয়া করে ভেতরে আসুন।”
          পরোক্ষ উক্তি : তিনি (আমাকে) ভেতরে যেতে অনুরোধ করলেন।
আবেগসূচক বাক্য
ক)      প্রত্যক্ষ উক্তি  : লোকটি বলল, “বাঃ। পাখিটি তো চমৎকার।”

         পরোক্ষ উক্তি :লোকটি আনন্দের সাথে বলল যে, পাখিটি চমৎকার । :
খ)       প্রত্যক্ষ উক্তি : ভিখারিনী বলল, “শীতে আমরা কতই না কষ্ট পাচ্ছি।”
        পরোক্ষ উক্তি : ভিখারিনী দুঃখের সাথে বলল যে, তারা শীতে বড়ই কষ্ট পাচ্ছে।

Content added By

# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন

খোকা তোমাকে বলল যে, তার বাবা বাড়ি নেই।
খোকা তোমাকে বলল যে, তার বাবা বাড়ি ছিলেন না।
খোকা তোমাকে বলল যে তোমার বাবা বাড়ি নেই ।
খোকা তোমাকে বলল যে, আমার বাবা বাড়ি ছিলেন না।
রহমান আমাকে বলল যে আমি এক্ষুণি যাচ্ছি
রহমান আমাকে বলল যে সে এক্ষুণি আসছে।
রহমান আমাকে বলল যে, তুমি তক্ষুণি যাচ্ছ ।
রহমান আমাকে বলল যে সে তক্ষুণি যাচ্ছে।
হামিদ তাদের পরদিন আসতে বলল ।
হামিদ তাদের বলল যে তারা যেন আগামীকাল আসে ।
হামিদ বলল যে তোমরা পরদিন এসো।
হামিদ তাদের বলল যে তারা যেন পরদিন আসে।
করিম তোমাকে বলল যে সে গতকাল ঢাকা গিয়েছিল ।
করিম তোমাকে বলল যে সে আজ ঢাকা গিয়েছিল।
করিম তোমাকে বলল যে, তুমি গতকাল ঢাকা গিয়েছিলে।
করিম তোমাকে বলল যে সে আগেরদিন ঢাকা গিয়েছিল।
রেবা আমাকে ভাই সম্বোধন করে বলল যে আমি কবে এখানে আসব।
রেবা আমাকে ভাই সম্বোধন করে জানতে চাইল যে আমি কবে সেখানে যাব।
রেবা আমাকে ভাই সম্বোধন করে বলল যে আমি কবে সেখানে যাব ৷
রেবা আমাকে বলল, তুমি কবে সেখানে আসবে।
Promotion